পৃথিবীর সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব মানুষকে পৃথিবী ছাড়ার তাগিদ হকিংয়ের!
পৃথিবীর সময় ফুরিয়ে
যাচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব
মানুষকে পৃথিবী ছাড়ার তাগিদ হকিংয়ের!
স্টিফেন
হকিং, প্রখ্যাত পদার্থবিদ ও কসমোলজিস্ট। মাসখানেক আগে তার মুখ থেকেই এসেছিল
সেই ভয়াবহ বিপদসংকেত – এই পৃথিবী আর খুব বেশিদিন মানুষের বেঁচে থাকার উপযোগী থাকবে
না। বড়জোর একশ বছর। তারপরই বিলীন হয়ে যাবে মানবসভ্যতা। ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে তিলতিল
করে গড়ে তোলা মানবসৃষ্ট এই স্বপ্নভূমি।
জলবায়ু
পরিবর্তনের প্রভাব, মহামারি ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এই গ্রহের অস্তিত্ব হুমকির মুখে
পড়ছে বলে জানিয়েছিলেন ব্রিটিশ এই বিজ্ঞানী। সাথে এ-ও সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন যে
মানুষ যদি সত্যিই তাদের নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে চায়, তবে অন্য কোনো গ্রহে আবাস গড়তে
হবে তাদেরকে, এছাড়া আর কোন পথ তাদের সামনে খোলা নেই।
‘এক্সপেডিশন
নিউ আর্থ’ নামের বিবিসির একটি নতুন তথ্যচিত্রে এ মন্তব্য করেছিলেন হকিং। বিবিসি
টু’তে ওই তথ্যচিত্র সম্প্রচার করা হয়েছিল। তথ্যচিত্রটির নির্মাতা হকিং নিজেই।
তথ্যচিত্রটি ছিল বিবিসির সায়েন্স সিজন ‘টুমোরোস ওয়ার্ল্ড’-এর অংশ।
কিন্তু
তখন তিনি জানাতে পারেননি আদৌ অদূর ভবিষ্যতে মানুষের পক্ষে অন্য কোন গ্রহে আবাস গড়ে
তোলা সম্ভব হবে কি-না। তাই বিজ্ঞানে বিশ্বাস আছে এমন অনেকেই ধরে নিয়েছিল, আর সর্বোচ্চ দুই কি তিন প্রজন্ম
পরই হয়তো পৃথিবীর বুক থেকে বিলীন হয়ে যাবে মানবজাতির অস্তিত্ব।
কিন্তু না, বিপদসংকেত যেমন শুনিয়েছিলেন তিনি, তেমনি আশার আলোও দেখালেন সেই
স্টিফেন হকিংই। নরওয়ের ট্রন্ডহিমে স্টারমাস সায়েন্স ফেস্টিভ্যালে এক বক্তৃতায় তিনি
বাতলে দিয়েছেন, কোথায় হতে পারে মানবজাতির পরবর্তী গন্তব্য। তাঁর মতে, চাঁদ ও মঙ্গল হতে পারে মানুষের
‘নেক্সট স্টপেজ’, যেখানে অন্তত এক মিলিয়ন বা দশ লক্ষ বছর নির্বিঘ্নে বাস করতে পারবে
আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। এবং সেই নতুন জীবনের সূচনা হতে পারে আগামী ৩০ বছরের
মধ্যেই।
তিনি বলেন, ‘পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আর খুব
বেশি দেরি নেই। আমাদের এই গ্রহের খুব কাছে থাকা (নিয়ার-আর্থ অবজেক্ট) গ্রহাণু বা
অ্যাস্টারয়েড একের পর এক আছড়ে পড়তে চলেছে পৃথিবীর ওপর। এই পৃথিবীটাকে ধ্বংস হয়ে
যাওয়ার রাস্তাগুলি আমরাই এত দিন ধরে তৈরি করেছি, করে চলেছি। আমাদের জন্যই
উদ্বেগজনক হারে বদলে যাচ্ছে জলবায়ু। উত্তরোত্তর দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে
‘জ্বর’ বাড়ছে পৃথিবীর। দুই মেরুর বরফ গলে যাচ্ছে অসম্ভব দ্রুত হারে। বসতি গড়তে
যথেচ্ছ বন কেটে ‘নির্বংশ’ করছি গাছপালা। তাতে হইহই করে ভেঙে পড়ছে ইকোসিস্টেম বা
বাস্তুতন্ত্র। বহু প্রজাতির প্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে, বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বহু প্রজাতির
উদ্ভিদ। এটা কোনও সায়েন্স ফিকশন নয়। সায়েন্স ফ্যাক্টস বা বৈজ্ঞানিক সত্য।
পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম ও সূত্র সেটাই বলছে।’
‘এর আগে
যখনই সভ্যতা অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে, বেঁচে থাকা, মাথা গোঁজার জায়গাটা যখন সংকুচিত
হয়ে এসেছে মানবসভ্যতার সামনে, তখনই সে নতুন নতুন জায়গা
আবিষ্কার করে নিয়েছে। ১৪৯২ সালে এই ভাবেই আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন কলম্বাস।
কিন্তু পৃথিবীতে আর তেমন কোনও জায়গা পড়ে নেই, যেখানে চলে গিয়ে, সরে গিয়ে এই সভ্যতা বেঁচে থাকতে, টিঁকে যেতে পারবে। এখানে আমাদের
জায়গাটা ছোট হতে হতে, হতে হতে পুরোপুরিই ফুরিয়ে গিয়েছে। তাই যেতে হবে অন্য মুলুকে।
কাছেপিঠে বলে, প্রথমে চাঁদে। তার পর মঙ্গলে। টার্গেট রাখতে হবে যাতে ৩০ বছরের
মধ্যেই চাঁদে গড়ে তোলা যায় সভ্যতার পরবর্তী উপনিবেশ। আর ৫০ বছরের মধ্যেই উপনিবেশ
গড়ে তুলতে হবে, তুলতেই হবে মঙ্গলে। ওই দুই ভিনমুলুকে গিয়ে আমাদের নতুন করে ইকো
সিস্টেম গড়ে তুলতে হবে, সব প্রাণী, উদ্ভিদ, ব্যাকটেরিয়া, অ্যামিবা, শৈবাল, ছত্রাক, পতঙ্গদের নিয়ে।’
তবে
মানবসভ্যতার পরবর্তী গন্তব্য হিসেবে যে শুধু চাঁদ ও মঙ্গলের ওপরই নির্ভরশীল হয়ে
থাকতে হবে, তেমনটা নয় মোটেই। এই দুই জায়গা ছাড়াও আরও একটি জায়গার কথা জানা আছে
তার।
‘সেটা হলো, আমাদের সবচেয়ে কাছে, এই সৌরমণ্ডলের ‘পাঁচিল’টা
টপকালেই যে ‘আলফা সেনটাওরি’ নক্ষত্রমণ্ডল রয়েছে, তারই একটি গ্রহ আলফা
সেনটাওরি-বি’তেও আমাদের খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা চালাতে হবে। কাজটা খুব
কঠিন হবে না, যেহেতু আমাদের থেকে সেই ভিন গ্রহটি রয়েছে মাত্র ৪ আলোকবর্ষ দূরে।
মানে, আলোর গতিতে ছুটলে আলফা সেনটাওরি-বি’তে পৌঁছতে সময় লাগবে মাত্র ৪ বছর।
আমরা যদি কোনও মহাকাশযানকে আলোর গতিতে ছোটাতে পারি, আর সেই মহাকাশযানটা চালাতে পারি
লেজার রশ্মি দিয়ে, তা হলে আমার বিশ্বাস, আর বড়জোর ২০টা বছর, তার মধ্যেই আমরা পৌঁছে যেতে পারব
আমাদের আরও একটা সম্ভাব্য আশ্রয়স্থল আলফা সেনটাওরি-বি’তে।’
তবে
পরবর্তী গন্তব্য যেখানেই হোক, একটা কথা কিন্তু বেশ পরিষ্কার –
সময় হয়ে এসেছে পৃথিবী নামক এই গ্রহ থেকে পাততাড়ি গোটানোর। কে জানে, আজ থেকে কয়েক প্রজন্ম পরে আমাদের
ভবিষ্যৎ উত্তরসূরীদের হয়তো কোন ধারনাই থাকবে না যে এককালে পৃথিবী নামে এত সুন্দর
একটা গ্রহ ছিল, যেখানকার মানুষ প্রতিনিয়ত হাসি-কান্না, রাগ-অভিমানে। তারা হয়তো জানবেও
না, ভালোবাসা নামক অদৃশ্য এক টানে কীভাবে একে অপরের সাথে নিবিড় বন্ধনে
আবদ্ধ থাকত এই গ্রহের মানুষ।
চাঁদ, মঙ্গল বা অন্য কোথাও বসে এই
পৃথিবীর সবকিছুই তাদের কাছে মনে হবে অলীক কল্পনা, যেন তা কখনো কোনোদিন ছিলই না!
তথ্যসূত্র-
ফক্সনিউজ, ওয়াশিংটনপোস্ট
No comments